রোমাঞ্চকর বান্দরবান


স্বরূপ সুমন
পর্বত, অরণ্য, গিরি, ছরা, ঝর্ণা ও সরীসৃপ সাঙ্গু নদী ও শঙ্খ নদের অববাহিকায় গুপ্ত এই নবস্বর্গের নাম বান্দরবান। পর্বতের প্রকৃতি গিরগিটি স্বরূপ, গিরগিটি যেমন খনে খনে রঙ বদলায় তেমনি পর্বতের প্রকৃতি খনে খনে সৌন্দর্য মেলে ধরে। আকাশ ছোঁয়ার ও মেঘের ভেলায় ভাসার বাসনা প্রায় সকলেরই থাকে, সেই বাসনা পূরণ করতে হলে যেতে হবে বান্দরবান। আপনি যদি মেঘের স্পর্শ পেতে চান তাহলে যেতে হবে বান্দরবান থানচি রোডে চিম্বুক পাহাড়ে। চিম্বুক পাহাড়ের গঠন প্রকৃতির কারনে পর্বতের খাজে খাজে আটকে থাকে মেঘেরভেলা।
চিম্বুকের চূড়া থেকে মেঘের স্পর্শ পেতে না পেতেই আপনার চোখে ধরা পরবে অপর পাশে পর্বতের ঢেউ। এই পর্বতের ঢেউ বান্দরবান সদরে টাইগার হিল, রুমার কেওক্রাডং, তিনমুখ পিলা (বাংলাদেশ,ভারত ও বার্মার সীমান্ত রেখা) থানচির তাজিংডং(বিজয়) ও সাকাহাফং(প্লান্ময়) সহ পর্বতের আরও অনেক জায়গা থেকেই দেখতে পাবেন। বান্দরবান ঘুরতে হলে যেতে হবে বান্দরবান সদর এর মেঘালয়, শৈলপ্রপাত, টাইগার হিল, তার পর বেরিয়ে যেতে পারেন রুমার উদ্দেশ্যে।
বান্দরবান সদর থেকে বাসে বা চান্দের গাড়িতে রুমা যেতে পারেন জন প্রতি ভাড়া লাগবে ৮০/১০০ টাকা। গাড়ি থেকে নেমে ট্রলারে বসে শঙ্খ নদ এর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আপনি পৌঁছে যাবেন রুমা সদর, জন প্রতি ভাড়া নিবে ২০/৩০ টাকা। বান্দরবান সদর থেকে রুমা সদরে পৌছাতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৩ঘণ্টা। রুমা সদরে থাকা ও খাওয়ার সুব্যাবস্তা করা আছে আপনার জন্য। রুমায় ১রাত থাকতে আপনাকে দিতে হবে জন প্রতি ১০০/১৫০ টাকা। রুমা সদর থেকে যেতে পারেন রিঝু ঝর্নায় ট্রলারে ভাড়া লাগবে ১২০০/১৫০০ টাকা এক ট্রলারে যেতে পারবেন ১০ জন। ট্রলারে ভালো না লাগলে পায়ে হেটে যেতে পারেন। পায়ে হেটে যেতে হলে আপনাকে একজন গাইড এর সহযোগিতা নিতে হবে, তার জন্য গাইড কে দিতে হবে ৩০০ টাকা এর বিনিময়ে সে আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে ও শারীরিক কষ্ট উপভোগ করবে কারন এটা তার পেশা। এক দিন রুমায় থেকে পরের দিন ভোরে আপনি যাত্রা করবেন বগালেক ও কেওক্রাডাং এর উদ্দেশে।


এই যাত্রার আগে আপনি ও আপনার দলকে কিছু সিদ্ধান্ত ও পস্তুতি নিয়ে যাত্রা করতে হবে।
(ক) আপনি কি পায়ে হেটে কেওক্রাডাং যাবেন না চান্দের গাড়িতে যাবেন। (খ) আপনি কি কেওক্রাডং থেকে রুমায় ফিরে আসবেন না থানচি হয়ে বান্দরবান সদরে আসবেন। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলবো পায়ে হেটে যান এবং সামনের দিকে যান। রুমা থেকে বের হওয়ার আগে পস্তুতির কথা বলা হয়েছিল। সর্বপ্রথম আপনাকে এক জন গাইড ঠিক করতে হবে। গাইড নির্বাচনের উপর নির্ভর করছে আপনার ভ্রমণের সফলতা। আপনাকে যে পথে পাঠানো হচ্ছে ভ্রমন যাত্রায় বাংলাদেশের একমাত্র রোমাঞ্চকর পথ এটি । তাই গাইড হতে হবে অভিজ্ঞ। গাইড অভিজ্ঞ কিনা বুঝতে কিছু প্রশ্ন করুন। সে তাজিংডং, সাকাহাফং গিয়েছে কিনা গিয়ে থাকলে কতবার গিয়েছে? কোন গাইড একবার গিয়ে থাকলেও তাকে নিতে পারেন। কতদিন যাবত সে এই পেশায় আছে? তা জেনে নিন, সবচে ভাল হয় ৩ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এমন গাইড নিন। গাইড ঠিক করার পর আপনাকে নিরাপত্তা পাস নিতে হবে, বাংলাদেশ পুলিশ বা বাংলাদেশ আর্মির কাছ থেকে ঠিকঠাক মত
আপনার উদ্দেশ্যের কথা বলে বিনা টাকায় অনুমতি পাস নিয়ে হাটা ধরুন বগা লেকের উদ্দেশ্যে।


এবার বলা জাক আপনি এই ভ্রমণে কি কি সাথে নিতে পারবেন। আপনি সাথে নিতে পারবেন এক পিছ ফুলপ্যান্ট(অবশ্যই জিন্স ব্যাতিত, হালকা প্যান্ট), দুই পিছ টিশার্ট, দুই পিছ সর্টপ্যান্ট, এক পিছ ভারি ফুলহাতা গেঞ্জি, একটা গামছা, এক জোড়া রাবারের টেকসই জুতো আর পানি খাবার পাত্র এগুলি প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক নিতেই হবে অন্যথায় বিপদে পরবেন। ৪ জনের গ্রুপে আরও যা যা নিতে হবে - দুই বক্স ওরস্যালাইন, এক পাতা ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট, এক পাতা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট, চার পিছ মুভ, দুই বাণ্ডিল কাপড়ের ব্যান্ডিজ, কিছু তুলা, জ্বর-কাশি-ঠাণ্ডার ঔষধ, আমাশয় ও ডায়রিয়ার ঔষধ, শুকনা খাবারের মধ্যে বিস্কুট, চার প্যাকেট ফ্যামিলি প্যাক নুডলস, ২৫০ গ্রাম করে হলুদ-মরিচ-লবন- তৈল, বন মোরগ খেলে মাংসের মসলা(তাজিংডং এর পর খেতে হলে রান্না নিজেকেই করতে হবে) । আরও নিতে পারেন হাতঘড়ি, দিক নির্ণয়ের কম্পাস, ছোট চাকু। এই অতীব প্রয়োজনীয় দ্রব্য অবশ্যই নিতে হবে। এবার আসা যাক মূল বিষয়ে প্রতি জনকে অবশ্যই ১০,০০০ করে টাকা নিতে হবে। প্রতি দিন গাইড বাবদ খরচ পরবে ৩০০/৫০০ টাকা করে। আপনি ভাবছেন এত টাকা এত কিছু কেন নিতে হবে তার উত্তরে বলবো, আপনাকে পাঠানো হচ্ছে - রিঝুঝর্ণা, বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিফাই ঝর্ণা, তিনপিলা মুখ, তাজিংডং, সাকাহাফং, নাইকখান, সাতবাইখুম, আমিয়াখুম, নাফাখুম। এই পথে যেতে যেতে আপনি ছোট-বড় নাম না দেয়া হাজারও ঝর্ণা ও ছরার দেখা পাবেন......।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পানাম নগর

হামহাম জলপ্রপাত

হাকালুকি হাওর