হামহাম জলপ্রপাত
হামহাম জলপ্রপাত
আহমেদ সাফি> সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার (রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের) গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকার রযেছে নৈসর্গিক এই জলপ্রপাত। যারা একটু ভিন্নভাবে প্রকৃতি দেখে অভ্যস্ত আর ছোটখাটো প্রতিকূলতাকে বাধা না মনে করে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আর আবিস্কারের নেশা থাকে তাদের কাছে হাম হাম জপ্রপাত হতে পারে আদর্শ স্থান। মূলত লোকালয় বা শহর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
এই
জলপ্রপাত সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা খুব বেশি আগের কথা না। পত্রিকাতে একদিন
একটা বিশেষ ফিচার ছাপা হয়েছিলো এই জলপ্রপাত নিয়ে। সেদিন থেকেই ওখানে যাওয়ার
ভুত মাথায় ছিলো।বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতদের অনেককেই যাওয়ার জন্য উৎসাহী
করার চেষ্টা করতে থাকলাম আর এর মধ্যেই সবকিছু ঠিকঠাক করে ছুটে গেলাম।
সবকিছু ছাপিয়ে এক সময় চলে এলাম কমলগঞ্জের একেবারে শেষ গ্রামটিতে নাম কলাবনপাড়া
কিংবা তৈলংবাড়ী মুলত এই জায়গাটির পরে আর কোন জনবসতি নেই আর এখান থেকেই
শুরু হয় হামহাম যাওয়ার আসল এডভেঞ্চার চারদিকে ঘন
জঙ্গল বিশেষ করে প্রচুর বাঁশবনে ভরপুর। কখনো বেয়ে উঠছি ছোট বড়
পাহাড় আবার কখনোবা বেশ খারা পাহাড়
বেয়ে নিচে নামতে হচ্ছে প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ আনন্দ নিয়ে। আবার অনেকটা পথ
যেতে হচ্ছে হিমশীতল ঠাণ্ডা পানির ঝিরি পথ ধরে। পুরো যায়গাটা যেন কোন বদ্ধ
কাচের ঘরে আটকে রাখা শুনসান নীরবতা। মাঝে মাঝেই খুব কাছ থেকে কিংবা দূর
থেকে ভেসে আসছে কোন অচেনা পাখির মিষ্টি কণ্ঠের গান। কখনো বা পাহাড়ের গায়ে
হালকা বিশ্রাম নিতে নিতেই দেখে নেয়া যায় অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি চোখ ভেঙ্গে
আসে মাতাল করে দেয়া সবুজে ঘেরা চারপাশে। ঘামে ভেজা শরীলটাকে ঝিরির পানিতে
ভিজিয়ে সমস্ত ক্লানি যেন দূর হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। পিচ্ছিল পাথুরে পথ আর
ঝিরির নেমে আসা পানিতে অতি সুক্ষ এক মিশ্রণ। এভাবে প্রায় অনেকটা সময় হাটার
পর হঠাৎ শুনতে পেলাম এক শিহরন জাগানিয়া শব্দ। সেই কাঙ্ক্ষিত হামহাম জলপ্রপাতের
শব্দ মনে হলো এইতো এসে পরেছি হয়তো আর একটু ভালো করে উকি দিলেই দেখা
দিবে কিন্তু আমাদের আরো কিছুটা পথ যেতে হলো তাঁর দেখা পেতে। অনেকটা কাছে
গিয়ে যখন সোজা তাকালাম প্রায়
১৬০ ফিট ওপর থেকে নেমে আসা জলরাশির সেই অসম্ভব
সুন্দর দৃশ্য দেখে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ । প্রবল ধারায় উপর
হতে গড়িয়ে পরছে পানি। চারিদিকে এক হিমশীতলতা অনুভব করলাম সাথে ঝর্নার জল
আর ছোট বড় পাথরে হাঁটু গেরে বসে থেকে এক কুয়াশাময় পরিবেশ। আসলে এ অনুভুতি
গুলো কেউ নিজ চোখে না দেখলে এভাবে বলে কয়ে বুঝানো কখনই সম্ভব না।
একদিকে
পাহারে ঘেরা বনজঙ্গল আর অন্যদিকে অবিরাম বয়ে চলা জলরাশি পাথরের খাজে
খাজে ঢেউ খেলে যায় ব্যাঙ আর ব্যাঙগাচির মেলা এ যেন এক সুন্দরি রমণীর গালে
টোলপরা হাসিকেও হার মানায়...।।
বনজঙ্গলের মায়া ছেরে আসতে আসতে আমাদের একটু বেশীই সময় লেগে যায়। যদিও সন্ধার আগেই চলে আসা উচিৎ কিন্তু সেদিন যে ছিলো জ্যোৎস্নায় মাতাল হবার দিন। দূর পাহাড়ের গায়ে বুকচিতিয়ে দারিয়ে থাকা বৃক্ষলতার জ্যোৎস্না স্নানে মিশে যাবার দিন সে জ্যোৎস্না স্নানের উৎসব এ জীবনে একবারই হয়তো আসে...।।
বনজঙ্গলের মায়া ছেরে আসতে আসতে আমাদের একটু বেশীই সময় লেগে যায়। যদিও সন্ধার আগেই চলে আসা উচিৎ কিন্তু সেদিন যে ছিলো জ্যোৎস্নায় মাতাল হবার দিন। দূর পাহাড়ের গায়ে বুকচিতিয়ে দারিয়ে থাকা বৃক্ষলতার জ্যোৎস্না স্নানে মিশে যাবার দিন সে জ্যোৎস্না স্নানের উৎসব এ জীবনে একবারই হয়তো আসে...।।
যেভাবে যেতে হবেঃ
ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার এর সরাসরি বাস
আছে ভারা ৪০০-৪৫০ টাকার মতো। এছাড়া
শ্রীমঙ্গল থেকেও যাওয়া যায়। মৌলভীবাজার
থেকে যেতে হবে কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ
হতে আদমপুর বাজার বাস ভাড়া পড়বে ১৫-২০
টাকার মতো। সেখান থেকে ২০০-২৫০ টাকা
ভাড়ায় সিএনজিতে পৌঁছে যেতে পারেন
আদিবাসী বস্তি তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবনপাড়া। এখান থেকেই হাটার
রাস্তা শুরু প্রায় ৮ কিলোমিটারের মতো পাহারি পথ শেষে দেখা মিলবে হামহামের। তবে
যেখান থেকেই যাওয়া হোক কলাবনপাড়ার দিকে অবশ্যই সকালে রওনা হতে হবে।
থাকার ব্যাবস্থাঃ
থাকার ব্যাবস্থা বলতে যাওয়ার আগে শ্রীমঙ্গলে এক রাত
থেকে পরদিন খুব ভোঁরে উঠে রওনা দিয়ে সারাদিন কাটিয়ে সন্ধার পরে শ্রীমঙ্গল
ফিরতে পারেন। তবে ঐ সময়টায় ফেরার সম্ভাবনা খুব একটা বেশি থাকেনা ।
সেক্ষেত্রে আদিবাসীদের বাড়িতে থাকা যায়। যদি শ্রীমঙ্গল ফেরা না যায় দুঃচিন্তার নেই কেননা তৈলং বাড়ী বস্তি বা কলাবনপাড়ায়
থাকার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।
সাবধানতাঃ
যাওয়ার আগে অবশ্যই
কলাবনপাড়ার স্থানীয়দের কাছ থেকে ভালো মন্দ জেনে যাওয়া উচিৎ। সাথে সরিষার
তেল আর লবণ রাখতে হবে কেননা প্রচুর জোঁকের আক্রমনে শুধু এই ব্যাবস্থাটাই
অনেকটা রক্ষাকরে। আর হাতে একটা ছোট বাঁশের টুকরা বা লাঠি সঙ্গে নেয়া
ভালো। এতে পাহাড়ি পথে শরীর এর ভারসাম্য সাপ বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী হতে
নিরাপদ রাখবে। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর খাবার স্যালাইন সাথে
অবসশই নিত হবে। সেভলোণ
আর তুলা নিতে রাখা ভালো তবে যতকিছুই হোক
খুবি সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন